বিবরণ
আমার দিদিমা, সিরাজগঞ্জের ভৌমিক বাড়ির বড় মেয়ে মাত্র ন’বছর বয়সে এলেন পাবনার চাকী বাড়ির বৌ হয়ে। দিদিমার সাথে আমার এক অদ্ভুত সখ্য ছিল। দিদিমার কাছে সিরাজগঞ্জ-পাবনার গল্প শুনতাম আর সেগুলো শুনে শুনে পূর্বপুরুষের দেশটাকে চেনার চেষ্টা করতাম। হরেক গল্প বলতে বলতে দিদিমা একদিন বললেন, “ দ্যাশডারে তো আর লইয়া আনতি পারি নাই, তাই দ্যাশের খাওন-দাওন, আচার-বিচার, পালা-পাব্বন, রীতি-রেওয়াজ গুলান আনছি। ওই গুলানরে হারাইয়ো না, তইলে দ্যাশডা হারায় যাইবে! বোঝলা?” কচি মনে গেঁথে গেল কথাগুলো। তার মানে এইগুলো জানতে পারলে, শিখতে পারলে আমি আমার পূর্বপুরুষের দেশটাকে ছুঁতে পারবো আর বাপিকেও ফিরিয়ে দিতে পারবো তার ‘দেশের বাড়িটা’! সেই শুরু, যাকে পাই পাবনার গল্প শুনি, রান্না শিখি। একটা সময় আমার কাছে দেশভাগটা ছিল গল্প শোনার বিষয়, ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনুভব করতে শুরু করি, না এ শুধু গল্পের নয়, বড় কষ্টের, ছিন্নমূল হয়ে অপরিচিত একটা দেশে এসে জীবন সংগ্রামটা এই মানুষগুলোর কাছে ‘গল্পের’ মতো ছিল না।